স্বাস্থ্যস্মতভাবে দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কার্যকারী উপায়
দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় খুঁজছেন, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও সফল হতে পারছেন না? তাহলে তথ্যসমৃদ্ধ ও গুরুত্বপূর্ণ এই লেখাটি আপনার জন্য, যেখানে সহজ, কার্যকর ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে পরীক্ষিত কিছু পদ্ধতি ধাপে ধাপে সুন্দরভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
ফিচার ইমেজ ০১
শুধু বেশি খাওয়া নয়, ওজন বাড়াতে দরকার সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম ও সঠিক জীবন
যাপনের অভ্যাস। পোষ্টটি মনোযোগ দিয়ে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়লে আপনি জানতে
পারবেন স্বাস্থ্যকরভাবে দ্রুত, নিরাপদ ও স্থায়ীভাবে ওজন বাড়ানোর সঠিক ও কার্যকর
উপায় গুলো।
সূচিপত্রঃ দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়
- স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়
- ওজন বৃদ্ধিতে উচ্চক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা
- শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা
- নিয়মিত আমিষযুক্ত খাবার গ্রহণ করা
- দৈনিক ৫-৬ বার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা
- ওজন বৃদ্ধিতে সুষম খাবার গ্রহণ করা
- ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর উপায়
- ওজন বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস তৈরি করা
- ওজন বৃদ্ধিতে সঠিক ঘুমের অভ্যাস তৈরি করা
- ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক কিছু হোম রেমিডি টিপস
- মন্তব্যঃ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়
স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায়
দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় সম্পর্কে আগ্রহী যারা, তারা প্রায়ই বিভ্রান্ত হন ভুল তথ্য
পেয়ে। আর তখন তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। আর এই দুশ্চিন্তা আপনার ওজন হ্রাসে
মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে। তখন তারা দিক হারা হয়ে যায় সমাজে নানা প্রতিকূলতার
সম্মুখীন হয়। কারণ স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন শুধু সৌন্দর্য নয়, স্বাস্থ্যের দিক
থেকে একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়, সমাজে নানা ভাবে হেয় প্রতিকূলতার
সম্মুখীন হতে হয়। স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজন বলতে বোঝায় আপনার উচ্চতা এবং বয়স
অনুযায়ী যখন আপনার ওজন কম থাকে।
আরো পড়ুনঃ মোটা না হওয়ার বিভিন্ন কারণ
আর আপনি যখন দেখবেন আপনার বিএমআই ১৮.৫ এর নিচে তখন আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে,
আপনার স্বাভাবিক ওজন যেটা থাকা উচিত সেটা নাই অর্থাৎ স্বাস্থ্যহীনতায় ভুগছেন। আর
তখন আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে, যে কি কারণে আপনার ওজন হ্রাস পাচ্ছে? ওজন
হ্রাস পাওয়ার কারণগুলো যদি আপনি নিশ্চিত হতে পারেন, আর এই নিশ্চিতকরণের জন্য
আপনাকে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ডাক্তার বিভিন্ন
পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যদি আপনাকে নিশ্চিত করে, যে আপনার মেডিকেলে কোন
সমস্যা নাই।
অর্থাৎ আপনার ডায়াবেটিস, থায়ারডিজম, ক্যান্সার, ধাতুগত সমস্যা, প্রেসারের সমস্যা
ইত্যাদির মত বড় কোন রোগ নাই, তবুও আপনার ওজন বাড়ছেনা তাহলে আপনি দ্রুত ওজন
বৃদ্ধিতে নিচের পরীক্ষিত ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়গুলো দেখতে পারেন। কারণ
নিম্নলিখিত এই নিয়ম অর্থাৎ দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় বা নিয়ম মেনে চললে আপনি পাবেন
সুগঠিত ও শক্তিশালী একটি স্বাস্থ্যবান শরীর।
ওজন বৃদ্ধিতে উচ্চক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা
আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধিতে ক্যালরিযুক্ত খাবারের কোন বিকল্প নাই। ক্যালরি ছাড়া
দ্রুত ওজন বাড়ানোর উপায় খোঁজা, যেন গাছ লাগাতে যেয়ে মাটির ব্যবহার না করার মত
বোকামি করা। ক্যালরিযুক্ত খাবার আমাদের শরীরে শক্তি যোগায়, পেশি ও কোষ গঠনে
সহায়তা করে, হরমোন ব্যালেন্স করে, অল্প বয়সে বার্ধক্য থেকে রক্ষা করে, শরীরকে
সজীব ও সতেজ রাখতে সহায়তে করে।
স্বাভাবিক অবস্থায় আপনি যে পরিমাণ ক্যালরি ব্যয় করছেন, দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করতে
আপনাকে দৈনিক তার থেকে অন্তত পাঁচশ থেকে সাতশত ক্যালরি বেশি গ্রহণ করতে হবে। এখন
হয়ত আপনি ভাবছেন উচ্চ ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার কোনগুলো? আসুন কিছু প্রচলিত উচ্চ
ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারের নাম জানি। যেমন- কাজু বাদাম, কাঠবাদাম, চীনা বাদাম, পেস্তা
বাদাম, আখরোট, খেজুর, কিসমিস, তালমাখনা, আলুবোখারা, দুধ, পনির, মাকা রুট, মুরগির
মাংস, হাঁসের মাংস, গোরুর মাংস, ছাগলের মাংস, গরুর কলিজা, ছাগলের কলিজা, গরুর
মগজ, ছাগলের মগজ, মিষ্টি আলু, আলু, কলা, ডিম, মাখন, চীয়া সীড, তিসি বীজ,
কুমড়োর বীজ, সূর্যমুখী বীজ ইত্যাদি।
এখন হয়ত আপনি ভাবছেন এই ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবারগুলো কি প্রিতিদিন খাবার মেনুতে রাখতে
হবে? অথবা প্রতিদিন কী এই সব খাবার খেতে হবে? উত্তর- না। উপরিউক্ত ক্যালরিসমৃদ্ধ
প্রতেকটি খাবারগুলোর মধ্যে রয়েছে শর্করা, আমিষ, প্রোটিন, খণিজ পদার্থ, পানি,
ভিটামিনের মিশ্রণ। আর এই প্রত্যেকটি উপাদানের পরিমাণ নির্দিষ্টতা রয়েছে। অর্থাৎ
সব শর্করা জাতীয় খাবার বা সব আমিষ জাতীয় খাবার বা অন্য যে উপাদানগুলো রয়েছে সব
একজাতীয় উপাদানযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে না। অর্থাৎ দ্রুত ওজন বৃদ্ধিতে প্রতিদিন
নির্দিষ্ট পরিমাণে শর্করা, আমিষ ও অন্যান্য ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে হবে।
এক নজরে ওজন বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় দৈনিক পুষ্টি উপাদান। (১৮-৪০) বছর বয়সের জন্য প্রযোজ্য
পুষ্টি উপাদান | দৈনিক প্রয়োজনীয় পরিমাণ | কীভাবে প্রভাবিত করে |
---|---|---|
ক্যালরি | ২৮০০-৩২০০ কিলোক্যালরি | ওজন বাড়াতে, শক্তির ঘাটতি পূরণ করতে |
আমিষ(প্রোটিন) | ১০০-১২০ গ্রাম | পেশি ও কোষ গঠন, এনজাইম তৈরিতে ইত্যাদি |
শর্করা | ৩৫০-৪৫০ গ্রাম | প্রধান শক্তির উৎস, ক্যালরি সরবরাহ করে |
চর্বি (ফ্যাট) | ৭০-৮০ গ্রাম | হরমোন উৎপাদন করে |
পানি | ৩-৩.৫ লিটার বা ১২-১৪ গ্লাস | হজম, তাপ নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি |
ভিটামিন | পরিমাণ নির্দিষ্ট নয়-ফলমূল ও সবজি থেকে নিতে হবে | রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে |
খণিজ লবণ (মিনারেল) | প্রাকৃতিক খাবার থেকে গ্রহণ করতে হবে যেমনঃ ক্যালসিয়াম,আয়রণ,জিঙ্ক ইত্যাদি | হাড়,রক্ত, পেশির কার্যক্রমে সহায়ক |
উপরিউক্ত দৈনিক পুষ্টি উপাদানের টেবিল থেকে নিশ্চই বুঝতে পেরেছেন, আপনার ওজন
বৃদ্ধি করতে দৈনিক কতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে। আর মনে রাখতে হবে যথাযথ নিয়ম
মেনে চললেই একমাত্র ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব। অন্যথায় ওজন বৃদ্ধির নামে স্বাস্থ্য
ঝুঁকির সম্মুখীন হতে পারেন।
শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা
আমাদের দেহের শক্তির প্রধান উৎস হলো শর্করা। প্রতিদিনের কাজকর্ম করার জন্য অর্থাৎ
দৈহিক শক্তির চাহিদা মিটানোর জন্য, আমাদের হজম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য
শর্করা অকল্পনীয় ভূমিকা পালন করে থাকে। শর্করা আমাদের দেহে চর্বিতে পরিণত হয়ে ওজন
বাড়াতে সাহায্য করে। তবে অবশ্যই আপনাকে অর্গানিক বা ন্যাচারাল শর্করা খেতে হবে।
রিফাইন্ডকৃত অতিরিক্ত শর্করা গ্রহণ করার মাধ্যমে তৈরি অতিরিক্ত চর্বি
স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। রিফাইন্ডকৃত খাদ্যের মধ্যে রয়েছে সাদা চিনি জাতীয়
খাবার, সফট ড্রিংক, মিষ্টি ইত্যাদি।
এখন আসুন জেনে নেই কিছু অর্গানিক বা ন্যাচারাল শর্করা জাতীয় খাবারের নাম যেমনঃ
আলু, চাল, পাস্তা, আটা, গম, ভূট্টা ইত্যাদি। দৈনিক অন্তত তিন বার নির্দিষ্ট সময়ে
শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণ করা উচিত। আশা করি এতক্ষণে আপনার অন্তর্নিহিত একটি
প্রশ্ন "কিভাবে ওজন দ্রুত ব্রদ্ধি করব" কিছুটা হলেও ব্যাখ্যা করতে পেরেছি। আশা
করি আজকের পর থেকে দ্রুত ওজন বাড়াব কিভাবে এই প্রশ্নের উওর নিয়ে আর কোন
বিভ্রান্তিকর তথ্য আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারবে না।
নিয়মিত আমিষযুক্ত খাবার গ্রহণ করা
আমিষ আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপাদান। শরীরে আমিষের ঘাটতি থাকলে
শরীরে মাংসপেশী তৈরি হয় না, হরমোন তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
হ্রাস পায়। ফলে আপনি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে পারেন না। আর তখন আপনার মনে একটি
প্রশ্ন আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয় শরীরের ওজন বৃদ্ধি করার উপায় কি?
তাই আপনি যদি শক্তিশালী, সুন্দর ও সুঠম দেহের অধিকারী হতে চান তাহলে অবশ্যই
আপনাকে আপনার খাদ্য তালিকায় আমিষ জাতীয় খাবার রাখতে হবে। আমিষ জাতীয় খাবারের
মধ্যে রয়েছে ডিম যাকে প্রকৃতির মাল্টিভিটামিন বলা হয়, রয়েছে মাছ, দুধ, মাংস, ডাল,
বীজ জাতীয় খাবার সূর্যমুখীর বীজ, কুমড়োর বীজ, তিসি বীজ, চীয়া সীড, মাকা রুটের মত
ইত্যাদি প্রোটিনজাতীয় খাবার। আর এই প্রোটিন জাতীয় খাবার পুরুষের পৌরুষত্ব বজায়
রাখতে সাহায্য করে অর্থাৎ টেষ্টোষ্টারাইন হরমোন তৈরিতে সাহায্য করে। অতএব আপনি
হয়ত এতক্ষণে বুঝে গেছেন ওজন বাড়ানোর উপায় হিসেবে আমিষের গুরুত্ব আপনার শরীরে
কতটুকু।
দৈনিক ৫-৬ বার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করা
দিনে বার বার খাওয়ার অভ্যাস করলে শরীরে ক্যালরির ঘাটতি পড়ে না। সাধারণত যারা ১৫
দিনে মোটা হওয়ার উপায় তারপর ৭ দিনে মোটা হওয়ার উপায়ের কথা ভাবেন অর্থাৎ
যারা দ্রুত কিভাবে ওজন বৃদ্ধি করার উপায়ের কথা ভাবেন তাদেরকে অবশ্যই দিনে ৩-৪
ঘন্টা পর পর পুষ্টি জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হবে। কারণ বার বার খাওয়ার ফলে সারাদিন
শরীরে স্থায়ীভাবে ক্যালরি সরবরাহ হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় পুষ্টি উপাদানগুলো
ভালভাবে শরীরে শোষিত হয়, হজম প্রক্রিয়া সহজতর হয় ফলে দ্রুত মোটা হওয়া সম্ভব হয়ে
ওঠে।
শরীরকে মোটা বা ওজন বৃদ্ধি করতে হলে অবশ্যই আপনাকে বেশি বেশি খাওয়ার অভ্যাস তৈরি
করতে হবে। কারণ আমার মতে খাবার আর স্বাস্থ্য একে অপরের পরিপূরক। আপনি যত খাবার
খাবেন আপনার তত ক্যালরি সঞ্চয় হবে, আর ক্যালরি সঞ্চয় হলে আপনার ওজন বৃদ্ধি পাবে।
তাই ওজন বাড়বে কিভাবে এটা না ভেবে বার বার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করবেন কিভাবে সেটা
নিয়ে ভাবুন। তাহলেই আপনি আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে পারবেন।
অনেকে আছে বার বার পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার পরেও দেখা যায় ওজন বৃদ্ধি করতে পারছে
না। কারণ তারা জানে না যে কিভাবে খাবার খেতে হয় বা কিভাবে খাবার খাওয়া উচিত। এই
কথা শুনে হয়ত আপনি ভাবছেন খাবার খাওয়ার আবার নিয়ম কী? নিশ্চয় এটা ভাবছেন। আপনি
সঠিক নিয়ম মেনে যদি খাবার না খান তাহলে আপনার হজম বিপাকে বাধা সৃষ্টি হয়। আর হজম
বিপাকে সমস্যা হলে অর্থাৎ আপনার খাবার যদি ঠিক মত হজম না হয় তাহলে আপনি আপনার ওজন
কখনো বৃদ্ধি করতে পারবেন না। এই কারণে সমাজে একটা প্রচলিত কথা প্রায় শুনা যায়
"পেট ভালো যার, সব ভালো তার"। তাই পেটকে ভালো রাখার জন্য প্রয়োজনীয় কিছু পরামর্শ
নিচে দেওয়া হলো হয়ত আপনার ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে।
পেটের হজম প্রক্রিয়া ভালো রাখতে কিছু পরামর্শ
- খাওয়ার আগে একটি ইতিবাচক মানসিকতা তৈরি করা এবং ব্রেনকে বোঝানো আপনি যাই খাবেন তাই হজমযোগ্য।
- খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট আগে অ্যাপেল সিডার ভিনেগার মিশ্রিত পানি অথবা হিমালয়া পিংক সল্ট মিশ্রিত পানি পান করা। আর আপনি যদি এগুলো সংগ্রহ করতে না পারেন তাহলে শুধু পানি খাবেন তবে পেট ভরে না।
- খাবারের মেনুতে রেইনবো সালাদ রাখুন অর্থাৎ বিভিন্ন কালারযুক্ত সালাদ রাখুন। যেমনঃ গাজর, পুদিনা পাতা, বাদাম, ট্ম্যাটো, শসা ইত্যাদি।
- খাবারের মেনুতে সবুজ সবজি রাখুন।
- আপনার খাওয়ার প্লেটকে চারটি ভাগে ভাগ করুন। দুই ভাগ শর্করা, এক ভাগ প্রোটিন, একভাগ সবজি রাখুন।
- আপনার পেটকে তিনটি ভাগে ভাগ করুন। যার একভাগ খাবার একভাগ পানি আর একভাগ খালি রেখে খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।
- খাওয়ার শুরুতে প্রথমে সবজি দিয়ে খাওয়া শুরু করুন। তারপর অন্যান্য খাবার খাওয়া শুরু করুন।
- খাওয়া শেষে অন্তত ৩০ মিনিট পর চিয়া সীডযুক্ত পানি অথবা নরমাল পানি পান করুন।
অতএব, এভাবে যদি আপনার দৈনন্দিন খাবার রুটিন সাজাতে পারেন তাহলে আপনার
পেটের হজম শক্তি বৃদ্ধি পাবে। খাবার শুধু খাওয়া নয়, বরং একটা সুশৃঙ্খল অভ্যাস
যা আপনার শরীর এবং ওজনকে ধীরে ধীরে গঠিত করে।
ওজন বৃদ্ধিতে সুষম খাবার গ্রহণ করা
সুষম খাদ্য বলতে এমন একটি খাদ্যকে বোঝায়, যেখানে শরীরের প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি
উপাদান নির্দিষ্ট পরিমাণে থাকে। এই উপাদানগুলো হলো শর্করা, আমিষ, চর্বি,
ভিটামিন, খণিজ লবণ ও পানি। সুষম খাদ্য আমাদের দেহকে সঠিকভাবে গঠন ও পরিচালনা
করতে সাহায্য করে। সুষম খাবার আমাদের দেহে শক্তি যোগায়, শরীর গঠনে সহায়তা করে,
রোগ প্রতিরাধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং শরীরের কার্যক্রম ঠিক রাখে।
অনেকে ভাবেন সুষম খাবার শুধু যারা অপুষ্টিতে ভুগেন তারা খাবে, এটা ভুল কথা ওজন
বৃদ্ধিতেও সুষম খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশেষ করে যারা ওজন বাড়াতে
চান তাদের সঠিক গাইডলাইন থাকা জরুরি। তাই আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি বা মোটা
হওয়ার খাদ্য তালিক প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধির জন্য শধু বেশি খাওয়া যথেষ্ট নয় জানতে
হবে কখন, কী খাবেন এবং কীভাবে খাবেন। অপুষ্টিতে ভোগেন তাদের পুষ্টির অভাব পূর্ণ
করার জন্য সুষম খাবারের তালিকা আর ওজন বৃদ্ধির জন্য সুষম খাবারের তালিকা ভিন্ন
হয়। চলুন আপনার ওজন বৃদ্ধির জন্য সুষম খাবারের তালিকা কেমন হয় দেখে নেই।
ওজন বৃদ্ধির জন্য সুষম খাদ্য তালিকা ( প্রতিদিনের রুটিন অনুযায়ী )
সময় | খাবার | খাদ্যের ধরন | লক্ষ্য |
---|---|---|---|
সকালে ঘুম থেকে উঠে | ১ গ্লাস দুধ + ৩-৪ টি বাদাম (কাজু/ আখরোট) | শক্তিদায়ক প্রোটিন ও ফ্যাট | শক্তি যোগানো ও শরীর প্রস্তুত করা |
সকাল (৮-৯)টা (নাশতা) | ভাত/ রুটি + ডিম/ সবজি/ ডাল+ কলা/ আম | কার্বোহাইড্রেট + প্রোটিন + ভিটামিন | শক্তি ও পুষ্টি সরবরাহ |
সকালের হালকা খাবার (১১) টা | দই/ চিজ/ ফল বা দুধ | পুষ্টিকর | ক্ষুধা নিয়ন্ত্রন ও প্রোটিন বৃদ্ধি |
দুপুরের খাবার | ভাত/ রূটি + মাছ/ মাংস/ ডিম + সবজি +ডাল + সালাদ | সম্পূর্ণ সুষম খাদ্য | ওজন বাড়ানোর মূল খাবার |
বিকালের নাশতা | বিস্কুট + চা/ দুধ + কলা/ বাদাম | পুষ্টিকর | শক্তি ধরে রাখা |
রাতের খাবার | ভাত/ রুটি +ডিম/ মাছ/ সবজি + দই/ ঘি | হজমযোগ্য ও পুষ্টিকর | ঘুমের আগে শরীর পুনর্গঠন |
ঘুমের আগে | ১ গ্লাস গরম দুধ + ১ চামচ মধু | প্রোটিন + ঘুম সহায়ক | শরীর পুনরুদ্ধারে সহায়তা |
ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন বাড়ানোর উপায়
আমাদের সমাজে ব্যায়ামের কথাটা শুনলেই মনে হয় ব্যায়াম করা হয় নিজেকে স্লিম করার
জন্য অর্থাৎ ওজন কমানোর জন্য। সমাজে একটা ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত যে কাউকে ব্যায়াম
করতে দেখলে মানুষের মনে হয় যে হয়ত লোকটি ডায়েবেটিসে আক্রান্ত অথবা ওজন কমাতে
ব্যায়াম করছে। কিন্তু ওজন বাড়ানোর জন্যও যে ব্যায়াম করা হয় এটা হয়ত আমরা অনেকেই
জানি না। ব্যায়াম ছাড়া ওজন বৃদ্ধি মানে শুধু চর্বি বাড়ানো। ব্যায়ামের মাধ্যমে
শরীরের পেশী শক্তিশালী হয় এবং ব্যায়াম চর্বি গলিয়ে পেশীতে পরিণত করে।
ব্যায়াম করার মাধ্যমে আপনি নিজেকে দুশ্চিন্তা মুক্ত রাখতে পারেন। ব্যায়াম আপনার
শরীর মনকে ভাল রাখতে সহায়তা করে। ব্যায়ামের মাধ্যমে হজম প্রক্রিয়া ভালো হয়।
আর আপনার পেটের হজম প্রক্রিয়া যদি ঠিক থাকে তাহলেই আপনি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে
পারবেন। শরীরের ওজন বাড়াতে যে ব্যায়ামগুলো সাধারণত সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে
তার মধ্যে অন্যতম হলো পুশ আপ, চেষ্ট প্রেস, দৌড়ঝাঁপ, সাঁতার ইত্যাদি। সপ্তাহে
আপনাকে অন্তত চার দিন ব্যায়াম করতে হবে আর সপ্তাহের বাকি কয় দিন আপনার
শরীরকে বিশ্রাম দিতে হবে। কারণ শরীরের পেশি গঠন বা ওজন বৃদ্ধি করতে শরীরের
বিশ্রামের প্রয়োজন।
ওজন বৃদ্ধিতে পর্যাপ্ত পানি পানের অভ্যাস তৈরি করা
পানির অপর নাম জীবন। অথচ সেই পানি পানের ক্ষেত্রে আমরা অসচেতন। পানিকে
উপেক্ষা করেই আমরা অনেকে শারীরিক ওজন বৃদ্ধির উপায় খুঁজি। পানিকে উপেক্ষা করে ওজন
বৃদ্ধির কথা ভাবা যেন গাছ লাগাতে যেয়ে মাটির ব্যাবহার না করার মত,অর্থাৎ বোকামি
ছাড়া আর কিছুই না। কারণ এই পানি আমাদের হজম ও খাবার শোষণে সাহায্য করে,কোষে
পুষ্টি পৌঁছাতে সাহায্য করে, পেশি গঠনে সাহায্য করে, ক্ষুধা বাড়ায় ও ডিহাইড্রেশন
রোধ করে এবং শরীরকে সতেজ ও সক্রিয় রাখতে সাহায্য করে।
আরো পড়ুনঃ পানি পানের সঠিক নিয়ম জানুন
আপনি আপনার স্বাস্থ্য বৃদ্ধি করার উপায় হয়ত এতক্ষণে বুঝে গেছেন। আপনি আপনার ওজনকে
বৃদ্ধি করতে চাইলে প্রতিদিন অন্তত ৩-৩.৫ লিটার বা ১২-১৪ গ্লাস পানি পান করতে হবে।
এটা নির্ভর করবে আপনার কার্যক্রম অনুযায়ী। আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধির মূল চাবিকাঠি
পর্যাপ্ত পানি পান করা।
ওজন বৃদ্ধিতে সঠিক ঘুমের অভ্যাস তৈরি করা
স্থায়ীভাবে মোটা হওয়ার জন্য খাবার আর ব্যায়ামের পাশাপাশি ঘুম একটি
শক্তিশালী উপাদান। আপনি ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার খেলেন, নিয়মিত ব্যায়াম করলেন কিন্তু
পার্যাপ্ত পরিমাণে বিশ্রাম বা ঘুমের অভ্যাস করলেন না তাহলে আপনার ওজন বৃদ্ধি শুধু
স্বপ্ন থাকবে বাস্তবে রুপ নিবে না। ঘুমের মাধ্যমে মানুষের পেশির পুনর্গঠন হয়ে
থাকে, হরমোন ব্যালেন্স করে, শক্তি ফিরিয়ে এনে খাওয়ার ইচ্ছা জাগায়, হজম ও
বিপাকক্রিয়া ঠিক রাখে ফলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পায়।
স্থায়ীভাবে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করতে হলে আপনাকে নিয়মিত ৭-৯ ঘন্টা ঘুমাতে হবে।
আপনাকে ঘুমাতে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় ঠিক রাখতে হবে। অর্থাৎ নিয়মিত নির্দিষ্ট
সময়ের মধ্যে ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম ছাড়া শরীরের ওজন বৃদ্ধি করা সম্ভব
নয়। তাই ওজন বৃদ্ধি করতে নিয়মিত ঘুমের অভ্যাস গঠন করতে হবে।
ওজন বৃদ্ধিতে সহায়ক কিছু হোম রেমিডি টিপস
ওজন বৃদ্ধিতে উপরিউক্ত নিয়মের পাশাপাশি আপনি কিছু ঘরোয়া পাদ্ধতি অবলম্বন করলে
উপকার পাওয়া যায়। অনেকেই জানতে চান সকালে খালি পেটে কি খেলে ওজন বাড়ে তাদের জন্য
আজকের এই রেমিডি বেশি কার্যকর। আপনি আপনার ওজন বৃদ্ধি করতে প্রতিদিন রাতে এক
গ্লাস পানিতে কিছু বাদাম, কিছু কাঁচা ছোলা, কিছু কিসমিস ভিজিয়ে রাখবেন এবং সকালে
ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করার পূর্বে গ্লাসের পানিটা ছেঁকে নিয়ে পানিসহ খেয়ে ফেলুন এবং
বাদাম,কিসমিস এবং ছোলা সুন্দর করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। এভাবে যদি আপনি
নিয়মিত খেতে পারেন তাহলে আপনার ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
মন্তব্যঃ স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দ্রুত ওজন বৃদ্ধির কার্যকরী উপায়
দ্রুত ওজন বৃদ্ধির উপায় খুঁজতে গিয়ে অনেকেই অস্বাস্থ্যকর পথ বেছে নেন, যা
শরীরের ক্ষতির কারণ হতে পারে। দ্রুত ওজন বৃদ্ধি মানে চর্বিযুক্ত ওজন নয় বরং
শক্তিশালী পেশিযুক্ত ওজন। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ওজন বাড়াতে সুষম খাবার খাওয়া,
হালকা ব্যায়াম এবং পর্যাপ্ত ঘুম অত্যন্ত কার্যকর। এতে শরীরের পুষ্টির ঘাটতি পূরণ
হয় এবং ধীরে ধীরে শরীরের ওজন বৃদ্ধি করে।
অতএব,লেখক হিসেবে আমি এতটুকু বলতে পারি যে উপরিউক্ত আলোচনাকৃত নিয়মানুযায়ী জীবন
পরিচালনা করতে পারলে শরীরের ওজন দ্রুত বৃদ্ধি পাবে। তবে মনে রাখতে হবে অবশ্যই
ধৈর্য ধরতে হবে কারণ রাতারাতি ওজন বৃদ্ধি হতে পারে না এর জন্য প্রয়োজন সময়ের। মনে
রাখার বিষয় রাতারাতি ওজন বৃদ্ধি কথাটি পশুর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে, মানুষের জন্য
প্রযোজ্য নয়। তাই নিয়ম মেনে জীবন পরিচালিত করুন আর দ্রুত ওজন বৃদ্ধি করুন।
JI Digital IT-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url