পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায় সম্পর্কে সকলের জানা উচিত। কারণ
বর্তমান ডিজিটাল যুগে পর্নগ্রাফি আসক্তি একটা গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ইন্টারনেটের সহজ ব্যবহার ও মোবাইল ফোনের অবাধ ব্যবহারের ফলে যে কেউ যে কোন স্থানে
বসে পর্ণগ্রাফি সাইটে প্রবেশ করতে পারে।
আর এই পর্ণগ্রাফি আসক্তি শুধু ব্যক্তিগত জীবনকে প্রভাবিত করে না, বরং মানসিক
স্বাস্থ্য কর্মক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাই আজকের এই
আর্টিকেলে আমরা পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি কি, পর্ণগ্রাফি আসক্তি ও ভয়াবহতা, এর কারণ,
এবং পর্ণগ্রাফি থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে আলোচনা করব।
সূচিপত্রঃ পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
- পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
- পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি কি অথবা পর্ণগ্রাফি বলতে কি বোঝায়
- পর্ণগ্রাফি আসক্তি কি বা পর্ণ আসক্তি কি
- পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ
- পর্ণগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তিদের লক্ষণসমূহ বা আচরণবিধি
- পর্ণোগ্রাফি আসক্তিতে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগসমূহ
- পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির উপায়
- মন্তব্যঃ পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায় সম্পর্কে আমাদের সমাজের প্রত্যেকটা
মানুষের জন্য জানা খুব জরুরি। কেননা আমাদের সমাজে তরুণ থেকে শুরু করে বৃদ্ধ বয়সের
মানুষেরা এই পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। বর্তমান প্রযুক্তিনির্ভর যুগে
ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় পর্ণগ্রাফি মানুষের হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। আর এই অশ্লীল
বা নগ্ন ভিডিও মানুষ কৌতুহলবশত দেখা শুরু করলেও ধীরে ধীরে তা এক ভয়াবহ আসক্তিতে
রূপ নেয়। পর্ণগ্রাফি আসক্তি শুধু মানসিক স্বাস্থ্য নয়, ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক
সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এটা এক প্রকার মাদকাশক্তির মত যা তার মনের আবেগ বিবেগকে
নষ্ট করে দেয় এবং বাস্তব জীবন থেকে করে বিচ্ছিন্ন। এই আসক্তির কারণে দেখা দেয়
বিষণ্ণতা, একাকীত্ব এবং আত্ম বিশ্বাসের ঘাটতি।
আরো পড়ুনঃ অল্প বয়সে পর্ণ আসক্তির ক্ষতি
কি ভাবছেন নেতিবাচক দিক জানার পরেও কেন মানুষ পর্ণগ্রাফি দেখে এর কারণ হলো মানুষ
যখন পর্ণগ্রাফি দেখে তখন তার ব্রেন থেকে ডোপামিন নামক হরমোন নিঃসরণ হয়। আর এই
ডোপামিন নামক হরমোনের বৈশিষ্ট্য হলো যৌবন অটুট রাখা। কিন্তু মানুষ যখন পর্ণগ্রাফি
দেখে তখন ডোপামিন হরমোন সঠিকভাবে নিঃসরণ হতে পারে না, তখন হরমোন নিঃসরণে ব্যাঘাত
ঘটে আর সাময়িক আনন্দ বা তৃপ্তি অনুভব হয় এবং সামান্য তৃপ্তি বা আনন্দ তাকে ধীরে
ধীরে পর্ণগ্রাফি দেখতে আসক্ত করে। আর এই হরমোন সঠিকভাবে নিঃসরণ না হওয়ার কারণে
নিজেকে করে ফেলে ভারসাম্যহীন। এই আসক্তির কারণে সম্মুখীন হতে হয় যৌন অক্ষমতার
সৃষ্টি হয় পারিবারিক কলহ। আর এই পর্ণগ্রাফি আসক্তিতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকছে আমাদের
তরূণ সমাজ। তবে এই তরূণ সমাজকে পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্ত করা সম্ভব শুধু প্রয়োজন
আত্ম নিয়ন্ত্রণ, আত্ম শুদ্ধি এবং সচেতনতা প্রযুক্তির ব্যবহার।
পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি কি অথবা পর্ণগ্রাফি বলতে কি বোঝায়
পর্ন কথাটি ইংরেজি শব্দ (Porn) থেকে এসেছে। আর এই ইংরেজি porn শব্দের অর্থ
হলো- যে দোকানে বা জায়গায় অশ্লীল বই বা অশ্লীল রচনা বা চিত্রের সমাহার।
অর্থাৎ এখানে বুঝানো হয়েছে পর্ন বা পর্নগ্রাফি হল এমন একটি ছবি বা চিত্র, অশ্লীল
বা নগ্ন দৃশ্য ও ভিডিও যেটা দেখলে মানুষের যৌন উত্তেজনা হয়। আরো সহজভাবে বলতে
গেলে পর্ন বা পর্নগ্রাফি হলো সেই সব নগ্ন চিত্র বা ছবি ও ভিডিওর সমাহার যেখানে
বিভিন্ন অভিনয়ের মাধ্যমে তাদের যৌনাঙ্গ প্রদর্শন করে মানুষের যৌন উত্তেজনা সৃষ্টি
করে বা সহবাস করার মনোবাসনা জাগায় অথবা যৌন মিলন করার ইচ্ছাকে জাগ্রত করে।
পর্ণগ্রাফি আসক্তি কি বা পর্ণ আসক্তি কি
আসক্তি বলতে কোন কাজের পুনরাবৃত্তি করাকে বোঝায় অর্থাৎ কোন কাজ বার বারা করাকে
বোঝায়।আসক্ত কথাটা নেতিবাচক হিসেবে সাধারণত ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন যারা মাদক
সেবন করে তাদেরকে বলা হয় মাদকাসক্ত। কেন বলা হয় কারণ তারা এমন একটি পণ্য বা
দ্রব্য সেবন করে যেটা শরীরের জন্য ক্ষতিকর এবং সমাজের জন্য বিপজ্জনক। ঠিক তেমনি
যখন কোন ব্যক্তি বার বার নগ্ন ছবি বা ভিডিও দেখতে থাকে যেটা শারীরিক ও মানসিক ও
পারিবারিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে থাকে তাকে বলে থাকি পর্ণগ্রাফি আসক্তি বা পর্ণ
আসক্তি।
পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হওয়ার বিভিন্ন কারণ
কোন ব্যক্তি জন্মগতভাবে পর্ণ বা পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে জন্মগ্রহণ করে না। আমাদের
সমাজ এবং পরিবেশ শিক্ষা দেয় বা বাধ্য করে পর্ন দেখতে বা পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হতে।
সমাজ এবং পরিবেশ কিভাবে বাধ্য করে পর্ন দেখতে বা পর্ণগ্রাফিতে আসক্ত হতে নিচে
কিছু সম্ভাব্য কারণ উল্লেখ করা হলঃ
- ধর্মীয় শিক্ষার চর্চা না করা।
- মূল্যবোধ ও নৈতিকতা শিক্ষা না দেওয়া।
- ইন্টারনেট ব্যবহার খুবি সহজ হওয়ার কারণে যে কেউ যে কোন জায়গাইয় বসে পর্ণ ভিডিও দেখতে পারে এই ইন্টারনেটের কারণে।
- পরিবারে পিতা-মাতার মধ্যে বিশৃঙ্খলা এবং খারাপ ভাষা ব্যবহার করা।
- অশালীন পরিবেশে বেড়ে ওঠা।
- অল্প বয়সে মোবাইলের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
- সন্তানদের বিনোদনের ব্যবস্থা না করা।
- অল্প বয়সে বিভিন্ন মানসিক নির্যাতনের স্বীকার হওয়া।
- খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা করা।
- মাদকাসক্ত হওয়ার কারণে ইত্যাদি।
পর্ণগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তিদের লক্ষণসমূহ বা আচরণবিধি
পর্ন বা নগ্ন ভিডিও আমাদের সমাজকে ধবংস করে দিচ্ছে।এই নগ্ন ভিডিও সামাজিক
ব্যাধিতে পরিণত হয়ে গেছে। আর যারা এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গেছে বা আসক্ত হয়ে
গেছে তারা হয়ে পড়ছে সমাজের জন্য বোঝা। কারণ তারা সমাজের সুস্থ্য মানুষের মত
আচরণ করতে পারে না। নিচে পর্ণগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তির কিছু সম্ভাব্য
লক্ষণগুলো তুলে ধরা হলঃ
- পর্ন আসক্ত ব্যক্তি সবসময় একাকীত্ব পছন্দ করে বা একা থাকতে ভালোবাসে।
- পর্ণ আসক্ত ব্যক্তিরা সবসময় দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকে।
- পর্নগ্রাফিতে যারা আসক্ত হয়ে পড়েছে তাদের মধ্যে পরনির্ভরশীলতা বেশি লক্ষ্য করা যায়।
- তাদেরকে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগতে দেখা যায় অর্থাৎ তারা খুব সহজে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।
- তারা অন্যদের সাথে নিজেদেরকে বেশি তুলনা করে থাকে।
- তাদের স্মৃতিশক্তি লোপ পেতে দেখা যায়।
- তাদের মেজাজ খিটখিটে হতে দেখা যায় অর্থাৎ হঠাৎ করে তেমন কোন কারণ ছাড়াই রেগে যেতে দেখা যায়।
- পর্ণ আসক্ত ব্যক্তিদের ক্লান্তিতে ভুগতে দেখা যায়।
- তারা ভবিষ্যত নিয়ে খুব চিন্তিত থাকে কিন্তু কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না।
- পর্ণ আসক্ত ব্যক্তিদের প্রায় রোগা পাতলা হতে দেখা যায়।
- তাদের দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যা দেখা যায়।
- তাদের মধ্যে কর্মহীনতা লক্ষ্য করা যায়।
- পর্ণগ্রাফি আসক্ত ব্যক্তিদের মাঝে আত্ম হত্যা করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
পর্ণোগ্রাফি আসক্তিতে সৃষ্ট বিভিন্ন রোগসমূহ
পর্ণোগ্রাফি আসক্তি শারীরিক ও মানসিকভাবে বিভিন্ন সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। নিচে
এর কারণে সৃষ্ট কিছু উল্লেকযোগ্য রোগ ও সমস্যা উল্লেখ করা হল।
মানসিক ও স্নায়ুবিক রোগ
বিষন্নতাঃ অতিরিক্ত পর্ণ দেখার ফলে মন থেকে আনন্দ উদ্দিপনা লোপ পায় ফলে বিষন্নতার
জন্ম দেয়।
আরো পড়ুনঃ বিষণ্ণতা কি ও মুক্তির উপায়
উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তাঃ পর্ণগ্রাফি সবার সামনে দেখার বিষয় নয় কেননা এটা সামাজিক
ব্যাধি, লুকিয়ে লুকিয়ে বা আড়ালে মানুষ দেখে ফলে মানসিক উদ্বেগ ও অস্থিরতা দেখা
দেয়।
মনোযোগের ঘাটতিঃ যৌন উত্তেজক কন্টেন্ট মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কার্যকারিতা ব্যাহত
করে।
যৌন সংক্রান্ত সমস্যা
যৌন অক্ষমতাঃ যৌন উত্তেজনা উপভোগ করতে অসুবিধা হওয়া।
দাম্পত্য অশান্তিঃ জীবনসঙ্গীর প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া।
আচরণগত ও সামাজিক সমস্যা
অপরাধপ্রবণতাঃ পর্ণ দেখার কারণে আচরণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় এবং অপরাধ করার
প্রতি আগ্রহ দেখা যায়।
অন্যান্য সমস্যা
ঘুমের ব্যাঘাতঃ রাতে পর্ন দেখার অভ্যাস ঘুমের অভ্যাস নষ্ট করে।
শারীরিক ক্লান্তি ও দূর্বলতাঃ পর্ন আসক্ত ব্যক্তিরা সাধারণত হস্তমৈথুন করে থাকে
ফলে শরীরে ক্লান্তি ও দূর্বলতা দেখা দেয়।
মস্তিষ্কের ওপর চাপঃ অতিরিক্ত মোবাইল দেখার কারণে চোখ মাথাব্যাথার সমস্যা দেখা
দেয়।
পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির উপায়
পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি একটি সামাজিক ব্যাধি। আর এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সমাজের
নব্য তরুণরা হচ্ছে বিপদ্গ্রস্ত। ফলে আমাদের লুপ্ত হচ্ছে সামাজিক চেতনা বোধ,
দায়েত্ববোধ এবং নৈতিকতা। তাই সমাজের নৈতিকতা ও দায়িত্ববোধ ফিরে আনতে আমাদের
সমাজকে করতে হবে পর্ণমুক্ত।নিচে পর্ণ বা পর্ণগ্রাফি থেকে মুক্তির উপায় নিয়ে
আলোচনা করা হলঃ
- প্রথমত পর্ণ বা পর্ণগ্রাফিকে না বলার মানসিকতা তৈরি করা।
- ধর্মীয় বিধি-নিষেধ মেনে চলা অর্থাৎ যার যার ধর্মানুযায়ী নিয়মিত প্রার্থনার অভ্যাস তৈরি করা।
- যখনি পর্ণ দেখার মানসিকতা তৈরি হবে তখনি নিজেকে কোন কাজে ব্যাস্ত রাখা।
- খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করা।
- বই বা ম্যাগাজিন পড়ার অভ্যাস তৈরি করা।
- একাকী থাকার অভ্যাস ত্যাগ করা।
- মোবাইল বা কম্পউটার নিরিবিলি জায়গায় ব্যবহার না করা।
- এককী না ঘুমানো।
- নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করা।
- বিভিন্ন পর্ণ ওয়েবসাইট আপনার ব্যবহৃত ডিভাইস থেকে ব্লক করুন।
- নিজেকে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ করুন যে কখনো পর্ণ বা পর্নোগ্রাফি দেখবেন না।
মন্তব্যঃ পর্ণগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা ও মুক্তির উপায়
পর্নোগ্রাফি আসক্তি ভয়াবহতা মুক্তির উপায় সম্পর্কে জানা প্রতিটি মানুষের জন্য
অপরিহার্য, কারণ এই আসক্তি একজন মানুষের জীবন ধ্বংসের দিকে নিয়ে যেতে
পারে। এটি শুধু ব্যক্তিগত সুখ শান্তি নয়, পারিবারিক বন্ধন ও সামাজিক
সুস্থতাকেও নষ্ট করে দেয়. তাই এখনই প্রয়োজন আত্মনিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা। যাতে
করে আমাদের হাতের কাছে থাকা প্রযুক্তি আমাদের শত্রু না হয়ে উঠতে পারে।
.
এখনই সময় নিজেকে পরিবর্তন করার এবং অন্যকে সচেতন করার।.অভ্যাস গড়ুন ভালো কাজে
ব্যস্ত থাকার, খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করার। জীবনের মূল্যবান সময় অশ্লীল কনটেন্ট
দেখে বা অশ্লীল ভিডিও দেখে নষ্ট না করে নিজের স্কিল ডেভেলপ করার দিকে মনোযোগী
হওয়া। মনে রাখবেন ইচ্ছাশক্তি আর সঠিক পদক্ষেপ পারে এই ভয়াবহ আসক্তি থেকে
মুক্তি দিতে এবং সুস্থ ও সুন্দর জীবন ফিরিয়ে আনতে।
JI Digital IT-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url